- খোরশেদ আলম মজুমদার, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, স্পেন শাখা।
১৯৩৩ সালে বগুড়ার বাগবাড়ী গ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্ম। স্কুলের লেখা-পড়া শেষ করে ১৯৫৩ সালে তিনি তদানীন্তন পাকিস্তান আর্মিতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি ফাষ্টইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানীর কমান্ডার হিসাবে লাহোরের খেমকারান সেক্টরে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছঁবঃঃধ ংঃধভভ পড়ষষবমব থেকে পি এসপি উপাধিতে ভূষিত হন। ঐ সালে তিনি কাকুলাস্থ তদানীন্তন পাকিস্তান সামরিক একাডেমীর ইন্সট্রাক্টর নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকার জয়দেবপুরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ছিলেন। জয়দেবপুরের বিােভকে কেন্দ্র করেই সারা দেশে গণ বিােভের দাবানল জ্বলে ওঠে। জিয়াউর রহমান ১৯৭০ সালে চট্টগ্রামের ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সংলগ্ন সেক্টরে সেনাবাহিনী পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন ও সাফল্যের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য কৃতিত্বের ফলশ্র“তি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে “বীর উত্তম” উপাধিতে ভূষিত করেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি কুমিল্লার একটি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। সেই সময় তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীপ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে আগষ্ট মাসে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩জুন তিনি সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রত্য গণভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলার একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক। জাতীয় রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চার এবং রাজনীতিকে গণমুখী ও অর্থনৈতিক মুক্তির অভিসারী করে তোলার ল্েয তিনি গঠণ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তিনি ছিলেন এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারী দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে জনগণের হাতে মতা হস্তান্তর করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন সমুদ্রতটে আছড়ে পড়া সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো প্রাণ চঞ্চল, তলাবিহীন ঝুড়িতে নতুন শস্য ঢেলে ঝুড়িটার তলা মেরামতের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দেশময় জাগিয়ে তুলেছিলেন কর্ম্যােদ্যম এবং কর্মযোগের এক নবজাগরণ, কাজ, কাজ, কাজ এই ছিল তার ডাক। বাস্তব সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে ডাক দিয়েছিলেন বিপ্লবের। তাঁর উদ্যোগের পিছনে সক্রিয় নিষ্ঠা এবং সৎ প্রয়াসকে সারা বিশ্ব অভিনন্দন জানিয়েছে। খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার ল্েয সারাদেশে ব্যাপক যান্ত্রিক সেচ ব্যবস্থা চালু সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে খাল খনন ও পূনঃখনন কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। শিল্পায়নের অগ্রগতিতে গ্রামের জনশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে কুটির, মাঝারি ও ছোট শিল্পের প্রসারে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। দেশের দশটি গ্যাস ফিল্ডের চারটিতে গ্যাস আহরণ শুরু করে। এসব গ্যাস ফিল্ড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কন্দ্রে, চা বাগান, সারকারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এবং বেশ কতগুলি শিল্প কারখানা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থলী কাজে ব্যবহারের জন্য গ্যাস সরবরাহ করেছিলেন। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিদ্যুৎ ও পানি সম্পদ উন্নয়নের পরিকল্পনা নেন। পল্লী বিদ্যুৎতায়ন শুরু করেছিলেন। পানি সম্পদের সার্বিক উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গঙ্গা বাঁধ ও ব্রহ্মপুত্র বাঁধ প্রকল্পের জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করেছিলেন। টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ উন্নয়নমূলক অতিরিক্ত দুটি ভূ-উপগ্রহ কন্দ্রে প্রতিষ্ঠার কাজ করেছিলেন। তথ্য ও বেতার উন্নয়নের েেত্র দুইশত চুয়াল্লিশ কোটি টাকার ও বেশী বরাদ্দ করেছিলেন। এক ল জনশক্তি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পঠিয়েছিলেন। তাদের উপার্জিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রারের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে দেশ প্রেমের বিকাশের ল্েয শিশু একাডেমীসহ ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করেছিলেন। জাতি গঠন ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের ল্েয যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিণের ব্যবস্থা করেন। জাতীয় স্বার্থের দিকে ল রেখে জিয়াউর রহমান একটি আধুনিক, সুশঙ্খল ও প্রশিণ প্রাপ্ত প্রতিরা বাহিনী গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেন। ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন সংস্থার প্রধান, জেরুজালেম কমিটি ও শীর্ষ স্থানীয় উপ-কমিটির সদস্য এবং ইরান ও ইরাক যুদ্ধ বন্ধের প্রথম কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। বিশ্ব শান্তি, স্বাধীনতা ও অগ্রগতির প্রতিষ্ঠার ল্েয জিয়াউর রহমান অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের জনগণকে সাহসী নেতৃত্বদানের মধ্য দিয়ে তিনি গোটা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে ছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০ শে মে চট্টগ্রাম সার্কেট হাউজে, কিছু মতালোভী সামরিক বাহিনীর সদস্যের আক্রমণে জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ..... রাজেউন)। আমি তার বিদায়ী আতœার মাগফেরাত কামনা করি।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেপথ্যের চালক ছিলেন চার সামরিক কর্মকর্তা। এক-এগারোর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সময় এদের মধ্যে দু’জন সেই সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকলেও বাকি দু’জনকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে মহা ক্ষমতাধর বানানো হয়েছিল। দীর্ঘদিনের দেশী-বিদেশী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে সেক্যুলার মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইতোমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত দু’জন অর্থাৎ লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব:) এম এ মতিন তাদের অবসর জীবনে আবার ফেরত গেছেন। তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ এখনো সেনাপ্রধান পদে আছেন। মাঝখানে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে নিজেই নিজেকে পদোন্নতি দেয়ার পাশাপাশি সেনাপ্রধানের চাকরিতেও তিনি এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিয়েছেন। ক্ষমতাধর চতুষ্টয়ের (এথষব সফ ঋসৎড়) শেষজন অর্থাৎ লে. জেনারেল মাস্দুউদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। শেষোক্ত ব্যক্তির সামরিক জীবন বিতর্কিত রক্ষীবাহিনীতে আরম্ভ হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছোট ভাই মেজর (অব:) সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা হওয়ার সুবাদে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন। তিনি সময়মতো সুযোগের সদ্ব্যবহারও করেছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে চুরমার করেছেন ও বেশ ক’জন সামরিক কর্মকর্তাকে সময়ের আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও বোধগম্য কারণেই এক-এগারোর প্রধান দুই রূপকারকে সসম্মানে তাদের পদে বহাল রেখেছেন। কঠিন হৃদয়ের সামরিক কর্মকর্তাদের কৃতজ্ঞতা নামক অপ্রয়োজনীয় বোধ না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মানবিক এই গুণটিকে এখনো ত্যাজ্য করতে পারেননি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ হলো, জেনারেল মইন এবং লে. জেনারেল মাসুদ উভয়ই এখনো চাকরিতে আছেন। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটকে অস্বাভাবিক বিজয় প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন করানোর পেছনে উল্লিখিত সেনাপতিদ্বয়ের অবদানের কথা এত কম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা যে ভুলতে পারেননি, এটাই মানবচরিত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।
বাঙালি মুসলমানের স্মৃতিশক্তির অভাবের প্রচারণা থাকলেও ২০০৭ ও ২০০৮ সালে চার ভিন্ন তারকার জেনারেলের কর্মকাণ্ড দেশের জনগণ বোধ হয় এখনো পুরোপুরি ভুলে উঠতে সক্ষম হয়নি। সেসময় টেলিভিশনের পর্দায় এদের প্রাত্যহিক হুঙ্কার দেখে কেঁপে ওঠেননি এমন নাগরিকের সংখ্যা আমার ধারণা, অনুল্লেখ্যই হবে। যে স্মৃতি এখনো টাটকা, তার কথা বলে পাঠকের আর বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই না। তবে একটি বিষয়ের উল্লেখ না করলে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা জনগণ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবেন না। তারিখটি ছিল ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তখন তার রাজনৈতিক জীবন রক্ষার সংগ্রামের অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ের স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের যৌথ সরকারের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে দেশের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন মার্কিন ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উদ্ভাবিত ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার মুখোশের অন্তরালের ‘মাইনাস ওয়ান’ কৌশল ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য। এ রকম একটি অনিশ্চিত পরিস্খিতিতে শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিুোক্ত প্রেসনোটটি জারি করে,
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০০৭
প্রেসনোট
নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সরকার অবগত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সফররত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীন লাগাতার আন্দোলন এবং কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট অরাজক পরিস্খিতিতে দেশের জন-শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই জরুরি-অবস্খা ঘোষণা করতে হয়েছে। সম্প্রতি তিনি বিদেশে অবস্খানকালেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন।
এমতাবস্খায় শেখ হাসিনা এ সময় দেশে প্রত্যাবর্তন করলে পূর্বের ন্যায় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং জন-শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে বিদ্বেষ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে পারেন। উহাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্খিতির অবনতি ঘটার এবং বিরাজমান স্খিতিশীলতা বিঘিíত এবং জননিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরো উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনা নিজেও তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাঁর দলের মাধ্যমে সরকারের নিকট বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধার আবেদন করেছেন। উল্লিখিত কারণে সরকার জনস্বার্থে বর্তমান অবস্খায় শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্খা গ্রহণ করেছে। গৃহীত এই ব্যবস্খা সাময়িক।
দেশের সকল বিমানবন্দর ও স্খলবন্দরে কর্মরত ইমিগ্রেশন বিভাগ, বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সকল এয়ারলাইনস্ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি প্রয়োজনীয় কার্যার্থে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এবং মহাপুলিশ পরিদর্শককেও এ বিষয়ে আবশ্যক ব্যবস্খা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
(মো: মজিবুর রহমান )
যুগ্ম-সচিব (রাজনৈতিক)”
তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) মতিন যাকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি বিবেচনা করেছিলেন, তিনিই আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অতীব নিন্দনীয় ঘটনার নায়কদের ক্ষমা করে অন্তত এ ক্ষেত্রে তার পিতার ঔদার্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তবে মানবচরিত্র এক দুর্জ্ঞেয় রহস্য। একই ব্যক্তির স্বাধীনতার মহান ঘোষক মরহুম জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতি জিঘাংসা ও প্রতিহিংসার কুৎসিত রূপ দেখে নিন্দা জানানোর উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কর্মজীবনে ভাগ্যের বরপুত্র রূপেই তার পেশার সর্বোচ্চ আসনটিতে বসেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি জিডি পাইলট হওয়ার বাসনা নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। সম্ভবত শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো সমস্যার কারণে বিমান বাহিনীর পাইলট হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। তারপর আমার জানা মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্খায় বিশেষ ব্যবস্খায় তাকে সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ২০০৫ সালে লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করলে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মেজর জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্তি পান এবং প্রথা অনুযায়ী তাকে লে. জেনারেল হিসেবে পদোন্নতিও দেয়া হয়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, মেজর (অব:) সাঈদ এস্কান্দারের সাথে বিশেষ ব্যক্তিগত বìধুত্ব থাকার কারণেই তিনি তৎকালীন সরকারের ‘নিজেদের লোক’ হিসেবে বিবেচিত হন এবং সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদটি লাভ করেন। জিডি পাইলট হতে ব্যর্থ একজন ব্যক্তির পক্ষে শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য ভাগ্যের বিশেষ সহায়তা লাগে বৈকি। এক-এগারো পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে প্রতীয়মান হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে সেনাপ্রধানের পদ লাভ করেও জেনারেল মইনের উচ্চাশা প্রশমিত হয়নি। তার ‘শান্তির অন্বেষা’ নামক গ্রন্থে বিস্ময়কর স্বপ্ন দর্শনের ঘটনাগুলো পাঠ করলে সেখানে অনেকাংশে স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের ধাঁচের একজন উচ্চাকাáক্ষী মানুষকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। স্বপ্নে একজন বুজুর্গ ব্যক্তি তাকে প্রাইজবন্ড কিনতে বললেন আর তিনি ১০ টাকার প্রাইজবন্ড কিনে ১০০ টাকা পুরস্কার জিতে নিলেন। কিংবা আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: তাকে দুই দুইবার স্বপ্নে দর্শন দিলেন। তার গ্রন্থে এই জাতীয় রহস্যময় ও অপ্রমাণিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জেনারেল মইন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অলৌকিকভাবে নির্বাচিত একজন ব্যক্তি। এ প্রকার বিচিত্র মানসিকতাসম্পন্ন জেনারেলকে কেবল পারিবারিক বìধুত্বের জোরে সেনাপ্রধানের পদে বসিয়ে চারদলীয় জোট সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এক-এগারোর অবধারিত গন্তব্যে ঠেলে দিয়েছে। পরাশক্তির নির্দেশে দেশে জরুরি আইন জারি করে দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশ পরিচালনার নামে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী উল্লিখিত চার জেনারেলই চারদলীয় জোট সরকারের সরাসরি সুবিধাভোগী ছিলেন। মেজর জেনারেল (অব:) মতিনকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অসময়ে অবসরে পাঠিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে এই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তাকে দুর্র্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। সম্প্রতি পদত্যাগকারী দুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে শেখ হাসিনার সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠিয়ে দিয়ে তার অধস্তন লে. জেনারেল হারুন-অর-রশীদকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়লাভ করার পর বেগম খালেদা জিয়া জেনারেল হাসান মশহুদকে মধ্যপ্রাচ্য নির্বাসন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। লে. জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ও জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সুবিধাপ্রাপ্তির ইতিহাস পূর্বেই বর্ণনা করেছি। এবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আশা করব, ভবিষ্যতে চারদলীয় জোট কোনো দিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করলে সেনাবাহিনীতে অন্তত তথাকথিত ‘নিজের লোক’ খোঁজার অলীক প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে কেবল মেধা, পেশাদারিত্ব, জ্যেষ্ঠতা, সততা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করবে।
জেনারেল মইন অবহিত ছিলেন, এক-এগারো-পরবর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এ কারণেই তৎকালীন সরকারকে জনগণের সামনে
অন্ততপক্ষে নৈতিক বৈধতা দেয়ার জন্য দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জেহাদ ঘোষণা করা হয়। একটি আদর্শিক লড়াইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করে, জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কেবল যে নিজে বিতর্কিত হয়েছেন তাই নয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমগ্র সেনাবাহিনীকেই জনগণের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ছেড়েছেন। সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ বিভাগের কর্মরত পরিচালককে দু:খভারাক্রান্ত হৃদয়ে ‘একজন সামরিক অফিসারের অনুভূতি’ শিরোনাম দিয়ে পত্রিকায় কলাম লিখতে হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, এই আকুতির পরও পূর্বের মতো জনগণের সহানুভূতি অর্জন করা যাচ্ছে না। মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে সেনাবাহিনী এ দেশের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর কাছে সর্বদাই সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছে। বিদেশী অর্থে প্রতিপালিত একটি ক্ষুদ্র সুশীল(?) গোষ্ঠীই কেবল বাংলাদেশের জন্ম থেকেই বিশেষ উদ্দেশ্যে জাতীয় সেনাবাহিনীর অব্যাহত বিরোধিতা করেছে। বিস্ময়করভাবে বর্তমান সেনাপ্রধান ও দুদক’র সাবেক চেয়ারম্যান উভয়ই এই ঐতিহ্যগতভাবে সেনাবিরোধী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করাকেই তাদের কর্তব্য বিবেচনা করেছেন। প্রতিদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গণবিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে মার্কিন ও ভারতীয় তাঁবেদার গোষ্ঠী অসাংবিধানিক সরকারের অবৈধ ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনকারী সব কর্মকাণ্ডকে মুক্তকচ্ছ হয়ে সমর্থন জুগিয়েছে। দেশ থেকে রাতারাতি দুর্নীতি দূর করার এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য চিহ্নিত সুশীল সংবাদমাধ্যমের সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমনের নামে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে হীনবল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধকে আক্রমণ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে শ্লথ, অর্থনীতিকে স্খবির, সেনাবাহিনীকে গণবিচ্ছিন্ন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ভঙ্গুর করে দেয়া হয়েছে। যারা দুর্নীতি দমন করার কথিত জেহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের আচরণ কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। দুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী একটির পর একটি বিতর্ক সৃষ্টি করে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কেবল যে প্রকাশ্যে দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির মতো আচরণ করেছেন তাই নয়, ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে তার ব্যক্তিগত গৃহ নির্মাণ ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ বসুìধরা গ্রুপের কর্ণধার জনাব আহমেদ আকবর সোবহানের ফুটবল ফেডারেশনকে বিশাল অঙ্কের অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে উপস্খিত থেকে তার দুর্নীতিবিরোধী অবস্খানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। জনশ্রুতি রয়েছে, জেনারেল মইনের দুই বছরব্যাপী পরোক্ষ শাসন চলাকালে বসুìধরা গ্রুপ প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীর বিশেষ সংস্খা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক বেতনভুক কর্মকর্তা মৌলিক অধিকারবহির্ভূতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জরুরি শাসনের পুরোটা সময় ধরে জনাব আহমেদ আকবর সোবহান সপরিবারে বিদেশে অবস্খান করে অতিসম্প্রতি দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। শোনা যায়, বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার পেছনে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল ও সেনাপ্রধানের বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে। অথচ এক-এগারো-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সামরিক-বেসামরিক যৌথ সরকার জনাব শাহ আলম ও জনাব তারেক রহমানের অর্থনৈতিক লেনদেনের গল্প প্রায় প্রতিদিন দেশবাসীকে শুনিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, বিদেশীদের প্ররোচনায় সেনাবাহিনীকে নানাভাবে ব্যবহার করার এক দুর্ভাগ্যজনক সময় হিসেবেই ২০০৭ ও ২০০৮ সাল বিবেচিত হবে। কেবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ করলেই এসব কলঙ্ক মোচন হবে না।
সেনাপ্রধান নিজ অবস্খান সংহত করার জন্য সেক্যুলার রাজনীতির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তির প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছেন। কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের যে প্রতিপত্তি ছিল নির্বাচিত সরকারের সময়ে তা হন্সাসপ্রাপ্ত হলেও আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের শাসকশ্রেণীর কাছে তিনি এখনো একান্ত আপনজন। আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন ক’দিন আগে বাংলাদেশে যে রহস্যময় সফর করে গেলেন, সেই সময়ও তিনি প্রটোকল বহির্ভূতভাবে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করে গেছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, শিবশঙ্কর মেনন নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য প্রদান করতে এসেছিলেন। তবে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এটা স্পষ্টভাবেই বোঝাতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশে এখন জরুরি অবস্খা না থাকলেও ভারত সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের চার তারকা জেনারেলকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে রাষ্ট্রটি বহি:শক্র দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রমণকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত ভূখণ্ড ব্যতীত আমাদের দেশটি প্রধানত ভারত ও খানিকটা মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। কাজেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ব্যক্তিটির সাথে ভারতের শাসক গোষ্ঠীর বিশেষ বìধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীর উদ্বিগ্ন বোধ করার কারণ সৃষ্টি হয়। নৈতিকভাবে সেনাবাহিনীর দুর্বল অবস্খানের কারণেই বিদেশী অর্থপুষ্ট সুশীল(?) সমাজ আজ দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের কাহিনী প্রচার করে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্খার শেষ সর্বনাশটাও সম্পন্ন করার অভিপ্রায়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামার সাহস পেয়েছে। ১৯৭২ সালে রক্ষীবাহিনী গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ থেকে সেনাবাহিনী উচ্ছেদের যে স্বপ্ন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা লালন করে এসেছেন, সেটি
বাস্তবায়নের জন্য এই ধরনের অনেক পদক্ষেপই আগামী পাঁচ বছরে গ্রহণ করা হবে বলেই আমার ধারণা। এক-এগারোর কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর বিতর্কিত অংশগ্রহণ তাদের এতটাই হীনবল করেছে যে, জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় ও জনাব ওয়ালিউর রহমানের জঙ্গিবিষয়ক মিথ্যা ও দেশবিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করার মতো সাহস দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্ত:প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আইএসপিআর এখন পর্যন্ত সঞ্চয় করে উঠতে পারেনি। এই পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতার সব দায়িত্ব অবশ্যই বর্তমান সেনাপ্রধানকে গ্রহণ করতে হবে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, তিনি ২০০৮ সালে নিজে তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে নিয়েছেন। এবার আশা করা যায়, তার প্রতি কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী
অন্তত আরো এক বছরের জন্য সেনাপ্রধানের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন। জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বোধ হয় এই সম্ভাবনার কথাই বাংলাদেশের জনগণকে আগাম জানিয়ে গেলেন।
লেখক : সাবেক জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা এবং বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান