Tuesday, June 9, 2009

সেনাপ্রধান যখন বিতর্কিত

- মা হ মু দু র র হ মা ন

ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেপথ্যের চালক ছিলেন চার সামরিক কর্মকর্তাএক-এগারোর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সময় এদের মধ্যে দুজন সেই সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকলেও বাকি দুজনকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে মহা ক্ষমতাধর বানানো হয়েছিলদীর্ঘদিনের দেশী-বিদেশী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে সেক্যুলার মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইতোমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত দুজন অর্থাৎ লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব:) এম এ মতিন তাদের অবসর জীবনে আবার ফেরত গেছেনতখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ এখনো সেনাপ্রধান পদে আছেনমাঝখানে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে নিজেই নিজেকে পদোন্নতি দেয়ার পাশাপাশি সেনাপ্রধানের চাকরিতেও তিনি এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিয়েছেনক্ষমতাধর চতুষ্টয়ের (এথষব সফ ঋসৎড়) শেষজন অর্থাৎ লে. জেনারেল মাস্দুউদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেনশেষোক্ত ব্যক্তির সামরিক জীবন বিতর্কিত রক্ষীবাহিনীতে আরম্ভ হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছোট ভাই মেজর (অব:) সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা হওয়ার সুবাদে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেনতিনি সময়মতো সুযোগের সদ্ব্যবহারও করেছেনশেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে চুরমার করেছেন ও বেশ কজন সামরিক কর্মকর্তাকে সময়ের আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও বোধগম্য কারণেই এক-এগারোর প্রধান দুই রূপকারকে সসম্মানে তাদের পদে বহাল রেখেছেনকঠিন হৃদয়ের সামরিক কর্মকর্তাদের কৃতজ্ঞতা নামক অপ্রয়োজনীয় বোধ না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মানবিক এই গুণটিকে এখনো ত্যাজ্য করতে পারেননি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ হলো, জেনারেল মইন এবং লে. জেনারেল মাসুদ উভয়ই এখনো চাকরিতে আছেন২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটকে অস্বাভাবিক বিজয় প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন করানোর পেছনে উল্লিখিত সেনাপতিদ্বয়ের অবদানের কথা এত কম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা যে ভুলতে পারেননি, এটাই মানবচরিত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য

বাঙালি মুসলমানের স্মৃতিশক্তির অভাবের প্রচারণা থাকলেও ২০০৭ ও ২০০৮ সালে চার ভিন্ন তারকার জেনারেলের কর্মকাণ্ড দেশের জনগণ বোধ হয় এখনো পুরোপুরি ভুলে উঠতে সক্ষম হয়নিসেসময় টেলিভিশনের পর্দায় এদের প্রাত্যহিক হুঙ্কার দেখে কেঁপে ওঠেননি এমন নাগরিকের সংখ্যা আমার ধারণা, অনুল্লেখ্যই হবেযে স্মৃতি এখনো টাটকা, তার কথা বলে পাঠকের আর বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই নাতবে একটি বিষয়ের উল্লেখ না করলে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা জনগণ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবেন নাতারিখটি ছিল ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিলআওয়ামী লীগ সভানেত্রী তখন তার রাজনৈতিক জীবন রক্ষার সংগ্রামের অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ের স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেনএ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের যৌথ সরকারের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে দেশের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন মার্কিন ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উদ্ভাবিত মাইনাস টুফর্মুলার মুখোশের অন্তরালের মাইনাস ওয়ানকৌশল ব্যর্থ করে দেয়ার জন্যএ রকম একটি অনিশ্চিত পরিস্খিতিতে শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিুোক্ত প্রেসনোটটি জারি করে,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তারিখ : ১৮ এপ্রিল ২০০৭

প্রেসনোট

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সরকার অবগত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সফররত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারেনউল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীন লাগাতার আন্দোলন এবং কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট অরাজক পরিস্খিতিতে দেশের জন-শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই জরুরি-অবস্খা ঘোষণা করতে হয়েছেসম্প্রতি তিনি বিদেশে অবস্খানকালেও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন

এমতাবস্খায় শেখ হাসিনা এ সময় দেশে প্রত্যাবর্তন করলে পূর্বের ন্যায় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং জন-শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে বিদ্বেষ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে পারেনউহাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্খিতির অবনতি ঘটার এবং বিরাজমান স্খিতিশীলতা বিঘিíত এবং জননিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছেআরো উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনা নিজেও তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাঁর দলের মাধ্যমে সরকারের নিকট বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধার আবেদন করেছেনউল্লিখিত কারণে সরকার জনস্বার্থে বর্তমান অবস্খায় শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্খা গ্রহণ করেছেগৃহীত এই ব্যবস্খা সাময়িক

দেশের সকল বিমানবন্দর ও স্খলবন্দরে কর্মরত ইমিগ্রেশন বিভাগ, বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সকল এয়ারলাইনস্ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি প্রয়োজনীয় কার্যার্থে অবহিত করা হয়েছেএ ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এবং মহাপুলিশ পরিদর্শককেও এ বিষয়ে আবশ্যক ব্যবস্খা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে

(মো: মজিবুর রহমান )

যুগ্ম-সচিব (রাজনৈতিক)

তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) মতিন যাকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি বিবেচনা করেছিলেন, তিনিই আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেনমাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অতীব নিন্দনীয় ঘটনার নায়কদের ক্ষমা করে অন্তত এ ক্ষেত্রে তার পিতার ঔদার্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেনতবে মানবচরিত্র এক দুর্জ্ঞেয় রহস্যএকই ব্যক্তির স্বাধীনতার মহান ঘোষক মরহুম জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতি জিঘাংসা ও প্রতিহিংসার কুৎসিত রূপ দেখে নিন্দা জানানোর উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে

সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কর্মজীবনে ভাগ্যের বরপুত্র রূপেই তার পেশার সর্বোচ্চ আসনটিতে বসেছেন১৯৭২ সালে তিনি জিডি পাইলট হওয়ার বাসনা নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেনসম্ভবত শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো সমস্যার কারণে বিমান বাহিনীর পাইলট হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় দেশে ফিরে আসেনতারপর আমার জানা মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্খায় বিশেষ ব্যবস্খায় তাকে সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে গ্রহণ করা হয়২০০৫ সালে লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করলে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মেজর জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্তি পান এবং প্রথা অনুযায়ী তাকে লে. জেনারেল হিসেবে পদোন্নতিও দেয়া হয়জনশ্রুতি রয়েছে যে, মেজর (অব:) সাঈদ এস্কান্দারের সাথে বিশেষ ব্যক্তিগত বìধুত্ব থাকার কারণেই তিনি তৎকালীন সরকারের নিজেদের লোকহিসেবে বিবেচিত হন এবং সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদটি লাভ করেনজিডি পাইলট হতে ব্যর্থ একজন ব্যক্তির পক্ষে শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য ভাগ্যের বিশেষ সহায়তা লাগে বৈকিএক-এগারো পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে প্রতীয়মান হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে সেনাপ্রধানের পদ লাভ করেও জেনারেল মইনের উচ্চাশা প্রশমিত হয়নিতার শান্তির অন্বেষানামক গ্রন্থে বিস্ময়কর স্বপ্ন দর্শনের ঘটনাগুলো পাঠ করলে সেখানে অনেকাংশে স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের ধাঁচের একজন উচ্চাকাáক্ষী মানুষকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়স্বপ্নে একজন বুজুর্গ ব্যক্তি তাকে প্রাইজবন্ড কিনতে বললেন আর তিনি ১০ টাকার প্রাইজবন্ড কিনে ১০০ টাকা পুরস্কার জিতে নিলেনকিংবা আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: তাকে দুই দুইবার স্বপ্নে দর্শন দিলেনতার গ্রন্থে এই জাতীয় রহস্যময় ও অপ্রমাণিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জেনারেল মইন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অলৌকিকভাবে নির্বাচিত একজন ব্যক্তিএ প্রকার বিচিত্র মানসিকতাসম্পন্ন জেনারেলকে কেবল পারিবারিক বìধুত্বের জোরে সেনাপ্রধানের পদে বসিয়ে চারদলীয় জোট সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এক-এগারোর অবধারিত গন্তব্যে ঠেলে দিয়েছেপরাশক্তির নির্দেশে দেশে জরুরি আইন জারি করে দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশ পরিচালনার নামে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী উল্লিখিত চার জেনারেলই চারদলীয় জোট সরকারের সরাসরি সুবিধাভোগী ছিলেনমেজর জেনারেল (অব:) মতিনকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অসময়ে অবসরে পাঠিয়েছিলবেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে এই অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তাকে দুর্র্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেনসম্প্রতি পদত্যাগকারী দুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে শেখ হাসিনার সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠিয়ে দিয়ে তার অধস্তন লে. জেনারেল হারুন-অর-রশীদকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়লাভ করার পর বেগম খালেদা জিয়া জেনারেল হাসান মশহুদকে মধ্যপ্রাচ্য নির্বাসন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেনলে. জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ও জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সুবিধাপ্রাপ্তির ইতিহাস পূর্বেই বর্ণনা করেছিএবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আশা করব, ভবিষ্যতে চারদলীয় জোট কোনো দিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করলে সেনাবাহিনীতে অন্তত তথাকথিত নিজের লোকখোঁজার অলীক প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে কেবল মেধা, পেশাদারিত্ব, জ্যেষ্ঠতা, সততা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করবে

জেনারেল মইন অবহিত ছিলেন, এক-এগারো-পরবর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিলএ কারণেই তৎকালীন সরকারকে জনগণের সামনে

অন্ততপক্ষে নৈতিক বৈধতা দেয়ার জন্য দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জেহাদ ঘোষণা করা হয়একটি আদর্শিক লড়াইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করে, জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কেবল যে নিজে বিতর্কিত হয়েছেন তাই নয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমগ্র সেনাবাহিনীকেই জনগণের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ছেড়েছেনসেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ বিভাগের কর্মরত পরিচালককে দু:খভারাক্রান্ত হৃদয়ে একজন সামরিক অফিসারের অনুভূতিশিরোনাম দিয়ে পত্রিকায় কলাম লিখতে হচ্ছেবাস্তবতা হলো, এই আকুতির পরও পূর্বের মতো জনগণের সহানুভূতি অর্জন করা যাচ্ছে নামেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে সেনাবাহিনী এ দেশের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর কাছে সর্বদাই সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছেবিদেশী অর্থে প্রতিপালিত একটি ক্ষুদ্র সুশীল(?) গোষ্ঠীই কেবল বাংলাদেশের জন্ম থেকেই বিশেষ উদ্দেশ্যে জাতীয় সেনাবাহিনীর অব্যাহত বিরোধিতা করেছেবিস্ময়করভাবে বর্তমান সেনাপ্রধান ও দুদকর সাবেক চেয়ারম্যান উভয়ই এই ঐতিহ্যগতভাবে সেনাবিরোধী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করাকেই তাদের কর্তব্য বিবেচনা করেছেনপ্রতিদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গণবিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে মার্কিন ও ভারতীয় তাঁবেদার গোষ্ঠী অসাংবিধানিক সরকারের অবৈধ ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনকারী সব কর্মকাণ্ডকে মুক্তকচ্ছ হয়ে সমর্থন জুগিয়েছেদেশ থেকে রাতারাতি দুর্নীতি দূর করার এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য চিহ্নিত সুশীল সংবাদমাধ্যমের সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছেদুর্নীতি দমনের নামে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে হীনবল, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধকে আক্রমণ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে শ্লথ, অর্থনীতিকে স্খবির, সেনাবাহিনীকে গণবিচ্ছিন্ন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ভঙ্গুর করে দেয়া হয়েছেযারা দুর্নীতি দমন করার কথিত জেহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের আচরণ কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল নাদুদক চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব:) হাসান মশহুদ চৌধুরী একটির পর একটি বিতর্ক সৃষ্টি করে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেনসেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কেবল যে প্রকাশ্যে দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির মতো আচরণ করেছেন তাই নয়, ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে তার ব্যক্তিগত গৃহ নির্মাণ ঋণসংক্রান্ত বিষয়ে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে অসত্য তথ্য দিয়েছেনসর্বশেষ বসুìধরা গ্রুপের কর্ণধার জনাব আহমেদ আকবর সোবহানের ফুটবল ফেডারেশনকে বিশাল অঙ্কের অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে উপস্খিত থেকে তার দুর্নীতিবিরোধী অবস্খানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেনজনশ্রুতি রয়েছে, জেনারেল মইনের দুই বছরব্যাপী পরোক্ষ শাসন চলাকালে বসুìধরা গ্রুপ প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীর বিশেষ সংস্খা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক বেতনভুক কর্মকর্তা মৌলিক অধিকারবহির্ভূতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেনজরুরি শাসনের পুরোটা সময় ধরে জনাব আহমেদ আকবর সোবহান সপরিবারে বিদেশে অবস্খান করে অতিসম্প্রতি দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেনশোনা যায়, বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার পেছনে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল ও সেনাপ্রধানের বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছেঅথচ এক-এগারো-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সামরিক-বেসামরিক যৌথ সরকার জনাব শাহ আলম ও জনাব তারেক রহমানের অর্থনৈতিক লেনদেনের গল্প প্রায় প্রতিদিন দেশবাসীকে শুনিয়েছেনপ্রকৃতপক্ষে, বিদেশীদের প্ররোচনায় সেনাবাহিনীকে নানাভাবে ব্যবহার করার এক দুর্ভাগ্যজনক সময় হিসেবেই ২০০৭ ও ২০০৮ সাল বিবেচিত হবেকেবল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ করলেই এসব কলঙ্ক মোচন হবে না

সেনাপ্রধান নিজ অবস্খান সংহত করার জন্য সেক্যুলার রাজনীতির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে মার্কিন-ভারত অক্ষশক্তির প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছেনকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের যে প্রতিপত্তি ছিল নির্বাচিত সরকারের সময়ে তা হন্সাসপ্রাপ্ত হলেও আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের শাসকশ্রেণীর কাছে তিনি এখনো একান্ত আপনজনআমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব শিবশঙ্কর মেনন কদিন আগে বাংলাদেশে যে রহস্যময় সফর করে গেলেন, সেই সময়ও তিনি প্রটোকল বহির্ভূতভাবে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করে গেছেনপত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, শিবশঙ্কর মেনন নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য প্রদান করতে এসেছিলেনতবে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এটা স্পষ্টভাবেই বোঝাতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশে এখন জরুরি অবস্খা না থাকলেও ভারত সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের চার তারকা জেনারেলকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেএকটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে রাষ্ট্রটি বহি:শক্র দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রমণকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলাবঙ্গোপসাগর বেষ্টিত ভূখণ্ড ব্যতীত আমাদের দেশটি প্রধানত ভারত ও খানিকটা মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিতকাজেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ব্যক্তিটির সাথে ভারতের শাসক গোষ্ঠীর বিশেষ বìধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীর উদ্বিগ্ন বোধ করার কারণ সৃষ্টি হয়নৈতিকভাবে সেনাবাহিনীর দুর্বল অবস্খানের কারণেই বিদেশী অর্থপুষ্ট সুশীল(?) সমাজ আজ দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের কাহিনী প্রচার করে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্খার শেষ সর্বনাশটাও সম্পন্ন করার অভিপ্রায়ে প্রকাশ্যে মাঠে নামার সাহস পেয়েছে১৯৭২ সালে রক্ষীবাহিনী গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ থেকে সেনাবাহিনী উচ্ছেদের যে স্বপ্ন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা লালন করে এসেছেন, সেটি

বাস্তবায়নের জন্য এই ধরনের অনেক পদক্ষেপই আগামী পাঁচ বছরে গ্রহণ করা হবে বলেই আমার ধারণাএক-এগারোর কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর বিতর্কিত অংশগ্রহণ তাদের এতটাই হীনবল করেছে যে, জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় ও জনাব ওয়ালিউর রহমানের জঙ্গিবিষয়ক মিথ্যা ও দেশবিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করার মতো সাহস দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্ত:প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আইএসপিআর এখন পর্যন্ত সঞ্চয় করে উঠতে পারেনিএই পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতার সব দায়িত্ব অবশ্যই বর্তমান সেনাপ্রধানকে গ্রহণ করতে হবেপূর্বেই উল্লেখ করেছি, তিনি ২০০৮ সালে নিজে তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে নিয়েছেনএবার আশা করা যায়, তার প্রতি কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী

অন্তত আরো এক বছরের জন্য সেনাপ্রধানের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করবেনজেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বোধ হয় এই সম্ভাবনার কথাই বাংলাদেশের জনগণকে আগাম জানিয়ে গেলেন

লেখক : সাবেক জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা এবং বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান

No comments:

Post a Comment