Tuesday, June 9, 2009

২৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত আকারে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর জীবনালেখ্য।


- খোরশেদ আলম মজুমদার, সভাপতি,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, স্পেন শাখা।

১৯৩৩ সালে বগুড়ার বাগবাড়ী গ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্ম। স্কুলের লেখা-পড়া শেষ করে ১৯৫৩ সালে তিনি তদানীন্তন পাকিস্তান আর্মিতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি ফাষ্টইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানীর কমান্ডার হিসাবে লাহোরের খেমকারান সেক্টরে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছঁবঃঃধ ংঃধভভ পড়ষষবমব থেকে পি এসপি উপাধিতে ভূষিত হন। ঐ সালে তিনি কাকুলাস্থ তদানীন্তন পাকিস্তান সামরিক একাডেমীর ইন্সট্রাক্টর নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকার জয়দেবপুরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ছিলেন। জয়দেবপুরের বিােভকে কেন্দ্র করেই সারা দেশে গণ বিােভের দাবানল জ্বলে ওঠে।
জিয়াউর রহমান ১৯৭০ সালে চট্টগ্রামের ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সংলগ্ন সেক্টরে সেনাবাহিনী পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন ও সাফল্যের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য কৃতিত্বের ফলশ্র“তি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে “বীর উত্তম” উপাধিতে ভূষিত করেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি কুমিল্লার একটি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। সেই সময় তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীপ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে আগষ্ট মাসে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩জুন তিনি সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রত্য গণভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলার একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক। জাতীয় রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চার এবং রাজনীতিকে গণমুখী ও অর্থনৈতিক মুক্তির অভিসারী করে তোলার ল্েয তিনি গঠণ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তিনি ছিলেন এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারী দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে জনগণের হাতে মতা হস্তান্তর করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন সমুদ্রতটে আছড়ে পড়া সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো প্রাণ চঞ্চল, তলাবিহীন ঝুড়িতে নতুন শস্য ঢেলে ঝুড়িটার তলা মেরামতের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দেশময় জাগিয়ে তুলেছিলেন কর্ম্যােদ্যম এবং কর্মযোগের এক নবজাগরণ, কাজ, কাজ, কাজ এই ছিল তার ডাক। বাস্তব সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে ডাক দিয়েছিলেন বিপ্লবের। তাঁর উদ্যোগের পিছনে সক্রিয় নিষ্ঠা এবং সৎ প্রয়াসকে সারা বিশ্ব অভিনন্দন জানিয়েছে। খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার ল্েয সারাদেশে ব্যাপক যান্ত্রিক সেচ ব্যবস্থা চালু সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে খাল খনন ও পূনঃখনন কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। শিল্পায়নের অগ্রগতিতে গ্রামের জনশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে কুটির, মাঝারি ও ছোট শিল্পের প্রসারে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। দেশের দশটি গ্যাস ফিল্ডের চারটিতে গ্যাস আহরণ শুরু করে। এসব গ্যাস ফিল্ড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কন্দ্রে, চা বাগান, সারকারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী এবং বেশ কতগুলি শিল্প কারখানা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থলী কাজে ব্যবহারের জন্য গ্যাস সরবরাহ করেছিলেন। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিদ্যুৎ ও পানি সম্পদ উন্নয়নের পরিকল্পনা নেন। পল্লী বিদ্যুৎতায়ন শুরু করেছিলেন। পানি সম্পদের সার্বিক উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গঙ্গা বাঁধ ও ব্রহ্মপুত্র বাঁধ প্রকল্পের জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করেছিলেন। টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ উন্নয়নমূলক অতিরিক্ত দুটি ভূ-উপগ্রহ কন্দ্রে প্রতিষ্ঠার কাজ করেছিলেন।
তথ্য ও বেতার উন্নয়নের েেত্র দুইশত চুয়াল্লিশ কোটি টাকার ও বেশী বরাদ্দ করেছিলেন। এক ল জনশক্তি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পঠিয়েছিলেন। তাদের উপার্জিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রারের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে দেশ প্রেমের বিকাশের ল্েয শিশু একাডেমীসহ ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করেছিলেন। জাতি গঠন ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের ল্েয যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিণের ব্যবস্থা করেন। জাতীয় স্বার্থের দিকে ল রেখে জিয়াউর রহমান একটি আধুনিক, সুশঙ্খল ও প্রশিণ প্রাপ্ত প্রতিরা বাহিনী গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেন। ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন সংস্থার প্রধান, জেরুজালেম কমিটি ও শীর্ষ স্থানীয় উপ-কমিটির সদস্য এবং ইরান ও ইরাক যুদ্ধ বন্ধের প্রথম কূটনৈতিক তৎপরতা চালান।
বিশ্ব শান্তি, স্বাধীনতা ও অগ্রগতির প্রতিষ্ঠার ল্েয জিয়াউর রহমান অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের জনগণকে সাহসী নেতৃত্বদানের মধ্য দিয়ে তিনি গোটা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে ছিলেন।
১৯৮১ সালের ৩০ শে মে চট্টগ্রাম সার্কেট হাউজে, কিছু মতালোভী সামরিক বাহিনীর সদস্যের আক্রমণে জিয়াউর রহমান শাহাদাৎ বরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ..... রাজেউন)। আমি তার বিদায়ী আতœার মাগফেরাত কামনা করি।

No comments:

Post a Comment