Tuesday, June 9, 2009

বিদ্যুৎ সমস্যা জোট সরকারের সৃষ্ট রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়



- আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র চলবে, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। দেশে জঙ্গি উথানের জন্য তারাই দায়ী। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তারা দেশের মানুষের নিরাপত্তা নষ্ট করেছে। বিদ্যুৎ সমস্যা তাদেরই সৃষ্ট, রাতারাতি এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না। শ্রমিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মিল, কলকারখানা বìধতে বিশ্বাস করে না; বরং নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা স্খাপনে আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। তিনি শ্রমিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শুক্রবার মহান মে দিবসে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শ্রমিক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টন ময়দানে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার। অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রম ও কর্মসংস্খান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা আবদুস সালাম খান, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র, শ্রমিক নেতা শাহজাহান খান এমপি, ফজলুল হক মন্টু, শুক্কুর মাহমুদ, হাসান আলী চারু সরকার, সরদার মোতাহার উদ্দিন, হাবিবুর রহমান আকন, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সুলতান আহমেদ, শামসুল আলম মিল্কী, রওশন জাহান সাথী এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী আমরা সরকারে এসে চালের দাম কমিয়েছি। ৪০ টাকা কেজির চাল এখন ১৮-২০ টাকায় পাওয়া যায়। শুধু চালের দাম নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও আমরা কমিয়েছি। কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়েছি। সারের দাম অর্ধেক করেছি, তেলের দাম কমিয়েছি। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম পায় সেজন্য ধানের দাম নির্ধারণ করেছি। বাংলাদেশের মানুষ যেন পেট ভরে ভাত ক্ষেতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে চার মাস। এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে পিলখানার জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই জঘন্য ঘটনায় আমরা আমাদের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হারিয়েছি। তিনি বলেন, বিদ্রোহ শুধু পিলখানায়ই ছিল না। সারাদেশের বিডিআরদের মধ্যে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করেছি। ৪৩ জন সেনাকর্মকর্তার জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। প্রতিটি সেনা অফিসারের পরিবারকে রক্ষা করতে পেরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, এত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান বিরোধী দল চায়নি। আরো বেশি লাশ পেলে বিরোধী দল তৃপ্ত হতো, তাদের কথা-বার্তায় এটাই বোঝা যায়। লাশ আর রক্ত পেলে বিএনপি খুব খুশি হয়। ক্ষমতায় থাকতে কত মানুষ তারা হত্যা করেছে, কত মা-বাবার বুক খালি করেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা যখন আন্দোলন করছিল, তখন তাদের ওপর গুলি চালিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে তারা হত্যা করেছে। অনুরূপভাবে সারের দাবিতে কৃষকরা যখন আন্দোলন করছিল তখন তারা ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের এখন আর আন্দোলন করতে হবে না। শ্রমিকরা যাতে ভালো থাকতে পারে সে ব্যবস্খা করা হবে। তিনি বলেন, কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না। শ্রমিকদের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করব। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী আমরা শ্রম আইন সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শ্রমিক-মালিক-সরকারের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থেই আমরা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করব। কারণ শ্রমিকরা ভালো থাকলে কলকারখায় উৎপাদন বাড়বে। শ্রমিকদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি করে রাষ্ট্র পাবে বৈদেশিক মুদ্রা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্খ্য, বাসস্খান, বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণসহ সব কিছুই করা হবে। শ্রমিক পরিবারের সুবিধার্থে শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরির বষয়সীমা ৬০ বছর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাংক করা হবে। এখান থেকে ঋণ নিয়ে শ্রমিকরা বিদেশে যাবে এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে। শ্রমিক হিসেবে যারা বিদেশে যাবে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং করানো হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্খান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আইএলও’র আবাসিক পরিচালক পানুদা বুন পালা, এমপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরান টি রহমান এবং শ্রমিক প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আতাহারুল ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মে দিবস মেলার উদ্বোধন করেন।

No comments:

Post a Comment