Tuesday, June 9, 2009

কোথায় যেন এক ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা চলতে ফিরতে দেখা

- ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে গলা ভারী করে যখন বলছিলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের কথা এবং তার জন্য তিনি যখন বেগম খালেদা জিয়াকে তার মইনুল রোডের বাড়িটি ছেড়ে দিতে বলছিলেন, তখন কেউ বিশ্বাস করেনি যে ওই বাড়ি থেকে তিনি সত্যি সত্যি বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেনসেদিন তিনি বলছিলেন, এই বাড়িটি পেলেই সেখানে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে দুটি করে ফ্ল্যাট দেবেনএকটিতে তারা থাকবেন আর একটি ভাড়া দিয়ে সংসারের ব্যয় সঙ্কুলান করবেনকিন্তু ব্যাপারটি এত অযৌক্তিক ছিল যে, অনেকেই মনে করেছেন শেখ হাসিনা তার স্বভাবসুলভ তির্যক, বাচনভঙ্গিই প্রয়োগ করছেনতিনি বলেছিলেন, নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার উচিত নিজে থেকেই বাড়িটি ছেড়ে দেয়াতখনো মনে হয়নি যে বলপ্রয়োগে এমন হীনকৌশল তিনি প্রয়োগ করবেনগত ৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠকে তিনি সে সিদ্ধান্তই নিয়ে বসেছেনমন্ত্রিপরিষদ ১৯৮২ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছেএ জন্য এখন সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইছেবুদ্ধিজীবী সমাজ, আইনজীবী সমাজ, ছাত্র-শিক্ষক সমাজ সব মহল থেকে একযোগে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে­ এই সিদ্ধান্ত বাতিল করো

শেখ হাসিনার সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল(?) ব্যক্তিরা যেসব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন সেগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে দেখা যেতে পারে : ০১. পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনাসদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গাটি সরকারের দরকার০২. বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্রের নামে যখন এই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়, তখন তাদের ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা ছিল না এবং আয়-রোজগারেরও কোনো পথ ছিল নাবর্তমানে তাদের আর সেই অবস্খা নেইবেগম খালেদা জিয়ার দুই ছেলে এখন অনেক সম্পদশালীসুতরাং এখন বরাদ্দ দেয়া বাড়িটি তাদের ফেরত দেয়া উচিত০৩. সরকারের নির্দেশে পদাধিকার বলে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান তৎকালীন সেনা প্রধান লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, বেগম জিয়া ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন জানলে তিনি তাকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দিতেন নাআর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া ওই বাসায় বসে রাজনীতি করায় সেখানে রাজনৈতিক লোকদের আনাগোনা হয়ফলে সেনানিবাসে নানা ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হয়০৪. কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, জিয়া পরিবারকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদের কোনো অনুমোদন নেইফলে ওই বাড়ির বরাদ্দই অবৈধতা ছাড়া একই পরিবারকে দুটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়ারও কোনো বিধান নেইএই প্রসঙ্গে আরো যেসব প্রশ্ন উথাপিত হয়েছে সেগুলো হলো­ ০১. মন্ত্রিপরিষদ সরাসরি এই বরাদ্দ বাতিলের এখতিয়ার রাখে কি না০২. নাকি শেখ হাসিনা এক টাকায় নিজেই নিজের নামে যে গণভবন লিখে নিয়েছিলেন ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সে গণভবনের বরাদ্দ বাতিল করায় প্রতিহিংসা বশত শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে বাস্তুচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিলেন০৩. এ দিকে আরো একজন প্রবীণ সাংবাদিক প্রস্তাব করেছেন, নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে তার নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করার আগে শেখ হাসিনা ধানমন্ডি লেক ভরাট করে যে সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন সেটি ছেড়ে দিয়ে বিরল ও মহান দৃষ্টান্ত স্খাপন করতে পারতেন

আমরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পারিপ্রথমত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ৫৬টি সেনা পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশে এমনকি সেনানিবাস এলাকায়ও জায়গা পাওয়া গেল না? সেনানিবাস এলাকায় বহু জায়গা খালি পড়ে আছেসেখানে অনায়াসে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এদের পুনর্বাসন করা যেতে পারেতৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষক ও বীরউত্তম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হনতখন তৎকালীন সরকার শহীদ জিয়ার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য তাদের ওই বাড়িটি বরাদ্দ করেনএখন সেই শহীদ পরিবারকে উচ্ছেদ করে সেখানে পিলখানায় নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি কোনো যৌক্তিক কথা হতে পারে না এবং এতে সেখানে নতুন করে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর মধ্যে এক স্খায়ী বিব্রতকর অবস্খার সৃষ্টি হবেসব সময়ই তাদের মনের ভেতরে এই বিষয়টি কাজ করবে যে, শহীদ জিয়ার পরিবারকে উচ্ছেদ করে তারা সেখানে পুনর্বাসিত হয়েছেনযদিও অনেকের এমন সংশয়ও আছে যে, বর্তমান সরকার তাদের মেয়াদকালে ভবন নির্মাণ করে এই পুনর্বাসনের কাজটি করতে পারবে কিনা? সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য এখন সমস্বরে এক রা তুলেছেনতারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবেবাড়িটি বরাদ্দের জন্য মন্ত্রিপরিষদের কোনো বৈঠক পর্যন্ত হয়নি এবং তাতে এই সিদ্ধান্তও অনুমোদিত হয়নিসরকারের এসব মন্ত্রী প্রকারান্তরে বাঙ্গালকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেনকিছু দিন পর তারা হয়তো এমন কথাও বলতে শুরু করবেন যে, রাজউকর প্লট বরাদ্দ দিতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবেযা-ই হোক, এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ১৯৮১ সালের ১২ জুনের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক, ১৯৮২ সালের ১৯ মার্চের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক এবং ১৯৮২ সালের ২৫ মে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বেগম জিয়া ও তার দুই পুত্রের জন্য এই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়িটি শহীদ জিয়াউর রহমান পরিবারের জন্য চূড়ান্ত বরাদ্দ দেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড প্রধান ও সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদএ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার তিন দফা বৈঠকে তা অনুমোদিত হয়েছেশেখ হাসিনা ওই বক্তব্য দেয়ার পর আশা করা গিয়েছিল যে, ‘মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ওয়ালারা চুপ মেরে যাবেনকিন্তু দেখা গেল তারাও ওই সারিন্দা বাজিয়েই চলেছেনলক্ষ্য সম্ভবত এই যে, পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী তো আর অসত্য বক্তব্য দিতে পারেন না, ফলে তিনি তার বক্তব্য দিয়েছেনকিন্তু মন্ত্রীরা বহু কণ্ঠে অসত্য বক্তব্য দিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে জনমনে সত্য বলে প্রমাণ করে ছাড়বেন

এ দিকে আবার আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমন কথা বলতে শুরু করেছেন, একসাথে কাউকে দুটি প্লট দেয়া বেআইনিসেই কারণে শহীদ জিয়ার পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেয়া গুলশানের প্লটটি রেখে সেনানিবাস এলাকার বাড়িটি কেড়ে নেয়া হয়কোন আইনের ধারা মতে দুটি প্লট দেয়া বেআইনি, সে কথা আইনের ধ্বজাধারীদের কেউ এখন পর্যন্ত উল্লেখ করেননিঅথচ দেশের শীর্ষস্খানীয় আইনজীবীরা বলছেন, সরকার কাউকে দুটি প্লট দিতে পারবে না, এমন কোনো কথা আইনে উল্লেখ নেইসরকার একটি দিতে পারে, দুটি দিতে পারে, ইচ্ছে করলে নাও দিতে পারেকিন্তু আইনি প্রমাণ উল্লেখ না করেই আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী দুটি প্লট বরাদ্দের বিষয়টিকে বেআইনি বলে অভিহিত করেই যাচ্ছেন

কারো নামে দুটি বাসা বরাদ্দ যদি বেআইনিই হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও কি তাহলে সে ধরনের বেআইনি কাজ করতে যাচ্ছেনশেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করে সেখানে তিনি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবেন এবং পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহতদের প্রতি পরিবারকে দুটি করে ফ্ল্যাট দেবেনএকটিতে তারা থাকবেন এবং অপরটি ভাড়া দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবেনযদি দুটি বাসা বরাদ্দ দেয়া বেআইনি হয় তাহলে এমন বেআইনি কাজ শেখ হাসিনা কেমন করে করবেন? নাকি এ শুধু কথার কথাবেআইনি কাজ না করার স্বার্থে শেষ পর্যন্ত কি তিনি দুটি ফ্ল্যাটের ঘোষণা দিয়ে প্রতি পরিবারকে শেষ পর্যন্ত একটি করে ফ্ল্যাট দেবেন? মহান আল্লাহতায়ালা এত দিন জীবিত রাখলে হয়তো দেখে যেতে পারব শেষ পর্যন্ত তিনি কী করেন?

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের শত অপপ্রচার স্বত্ত্বেও এখন প্রায় সবাই স্বীকার করেছেন, জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর তার পরিবারের তেমন কোনো সম্পদ ছিল নাতাদের থাকার যেমন জায়গা ছিল না তেমনি সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্খা ছিল নাপিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের বর্তমান অবস্খা খুব যে বেশি উন্নত এমন দাবি করা যায় না সে কথা মনে রেখেই সরকার তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্খা করেছেচাকরি সূত্রেও তাদের পরিবারগুলো বিধি অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা পাবেকিন্তু ছোট ছোট সন্তান বড় করে তোলার জন্য সেটা যথেষ্ট নয় মনে করেই সম্ভবত সরকার তাদের নিয়মিত আয়ের জন্য একটি করে অতিরিক্ত ফ্ল্যাট বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেকেউ এ রকম ধারণা পোষণ করে না যে এসব পরিবারের সদস্যরা চির জীবনই এ রকম সঙ্কটময় অবস্খায় থাকবেন তাদের ছেলে মেয়েরা বড় হবে লেখাপড়া শিখবেচাকরি-বাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য করে বিত্তবান হবেসরকার কি তখন তাদের নামে বরাদ্দ দেয়া ফ্ল্যাটগুলো ছেড়ে নিতে বলবে?

সে রকম আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার কোনো কারণ নেই, প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন যে যেহেতু জিয়াউর রহমানের দুই ছেলে আয়-উপার্জন করে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেসুতরাং মইনুল রোডের বাসাটি ছেড়ে দেয়া উচিতএ ধরনের চিন্তা নিষ্ঠুর এবং সুস্খ মানসিকতার পরিচায়ক নয়সরকার যদি কাউকে কিছু দান করে সে দান ফিরিয়ে নেয়ার জন্য হাত বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়

তৃতীয়ত এখন বলা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেয়ার ফলে সেনানিবাসে নানা ধরনের অসুবিধা হচ্ছেমহাজোট সরকারের শরিক, আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত মিত্র হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, তিনি যদি জানতেন যে, ভবিষ্যতে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন তাহলে তাকে ওই বাড়িটি বরাদ্দ দিতেন নারাজনীতি করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারকোথায়ও প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এমন কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না যে, ভবিষ্যতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজনীতি করতে পারবেন নাএ রকম শর্ত যদি আরোপ করা হয় তা হবে সংবিধানের বরখেলাপ এবং মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার পরিপন্থীকথাটা ঘুরিয়েও বলা যায়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যদি জানতেন, এই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশে দীর্ঘস্খায়ী স্বৈরশাসন কায়েম করবেন, তাহলে জিয়াউর রহমান নিশ্চয়ই তাকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতেন নাসে নিয়োগ না পেলে এমন হালকা উক্তি করার এখতিয়ারও তার থাকত নাধারণা করি, পিলখানায় নিহত যেসব সেনা পরিবারকে ফ্ল্যাট দেয়া হবে তাদের বরাদ্দের শর্তে রাজনীতি না করার কথা উল্লেখ থাকবে নাআবার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থেকে রাজনীতি করাটা অন্যায় এমন বক্তব্য দিয়ে সরকার নিজেকেই হাস্যকর করে তুলেছেআওয়ামী লীগের বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী অব: লে. কর্নেল ফারুক খানও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থাকেনতেমনিভাবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অব: মে. জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী অব: লে. জেনারেল নূরউদ্দিন খান, বিএনপির সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সেনানিবাস এলাকার বাসিন্দাএ ছাড়াও অব: কর্নেল অলি আহমদ, অব: ব্রি. জেনারেল হান্নান শাহ, অব: মে. জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ আরো বহু রাজনীতিক ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করেনতাতে যদি কোনো অসুবিধা না হয়ে থাকে তাহলে শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এত বড় অসুবিধা কেমন করে হলোএখানে আরো উল্লেখযোগ্য, আওয়ামী লীগ পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা পরিবারের মধ্য থেকে দুজনকে মহিলা কোটায় জাতীয় সংসদে সদস্য করে এনেছেঅর্থাৎ সেনানিবাসে পুনর্বাসনের আগেই তাদের রাজনীতিতে যুক্ত করা হয়েছে

এই সব ঘটনাই প্রমাণ করে, কোথায় যেন এক ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসাপরায়ণতা কাজ করছেঅনেকেই এ কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে অপরিমেয় লিïসাবশত এক টাকার বিনিময়ে নিজেই নিজের নামে লিখে নিয়েছিলেন সুবিশাল গণভবনএর সাথে শুধু সামন্ত প্রভুদের লিïসারই তুলনা চলে২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ওই বরাদ্দ বাতিল করেছিলতারই প্রতিশোধ হিসেবে শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাসভবন থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন

তবে এই দুটি ঘটনার মধ্যে গুণগত ফারাক আছেপ্রথমত বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কাছে ওই বাড়িটি চানওনি এবং নিজেই নিজের নামে লিখেও নেননিসরকার ও রাষ্ট্র সেটি তাকে দান করেছিলকারণ, ঢাকায় জিয়াউর রহমানের কোনো বাড়ি ছিল নাথাকারও জায়গা ছিল নাএ দিকে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনার থাকার জায়গার অভাব ছিল নাধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজস্ব বাড়ি ছিল এবং এখনো আছেশেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ধানমন্ডির পাঁচ নম্বরে নিজস্ব বাড়ি আছেতার পরও শেখ হাসিনাকে কেনো তার থাকার জন্য গণভবন লিখে নিতে হবে? সুতরাং দুটি ঘটনাকে এক করে দেখার অবকাশ নেই

বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সরকারের উচ্চমহলে কারো মধ্যেই কোনো রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণ নেইআর গত তিন মাসে সরকার সব ক্ষেত্রে যে অপরিমেয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা থেকে নাগরিকের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে সরিয়ে দেয়ার জন্যই এ শোরগোল তোলা হয়েছেদেশে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, কাজ নেই, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য লীগের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেইআওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অন্তর্কোন্দলে চতুর্দিকে ত্রাস আর ভীতিএর কোনো কিছুই সরকার মোকাবেলা করতে পারছে নাফলে যা ইস্যু নয়, তাকেই ইস্যু করে সঙ্ঘাতের পথে যেতে চাইছে সরকারএই পথ দেশকে যে পরিণামের দিকে নিয়ে যাবে সেটা কারো জন্য শুভ হবে না

No comments:

Post a Comment