Tuesday, June 9, 2009

ওয়াদা পূরণ করুন নইলে গদি ছাড়ুন


- বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

ঢাকার পল্টন ময়দানে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন : ঢাকা প্রতিনিধি

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও বেকার সমস্যার সমাধান করুননির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করুননা হলে গদি ছেড়ে দিনজনগণকে যাতে জোর করে আপনাদের তাড়াতে না হয়তিনি বলেন, দেশে জঙ্গি সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও সরকার জঙ্গি জঙ্গি করে ভীতিকর অবস্খা সৃষ্টি করছেএতে করে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে নাঅন্য দিকে দেশে জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলে বিদেশী সৈন্য আনার ব্যবস্খা করছে সরকারতিনি বলেন, এ সরকারের চার মাসে জনগণের কোনো সমস্যা সমাধানের পথে একটুও অগ্রসর হয়নি, বরং পদে পদে সমস্যা তৈরি হচ্ছেপিলখানায় যখন সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হচ্ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী ওই হত্যাকারীদের সাথে আলোচনার নামে চা পান করছিলেনএই প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশ ও জনগণ নিরাপদ নয়তিনি বলেন, ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ ও তালপট্টি দ্বীপ দাবির প্রতিবাদ করতে হবে সরকারকেগতকাল শনিবার মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীর পল্টন ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে বক্তব্য রাখার সময় বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন

২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সবচেয়ে বিশাল এই জনসমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও বেকারত্বের সমস্যায় দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেআমরা জনগণকে দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম এবং ওই নির্বাচনের ফলও মেনে নিয়েছিলামআমরা ভেবেছিলাম, গণতান্ত্রিক সরকার এলে তারা অন্তত দেশের মানুষের দু:খ বুঝবেজনগণের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করবেকিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা না করে এখন বাকশাল কায়েম করতে চায়কারণ তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি; ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেএ কারণে জনগণের দু:খ-দুর্দশা তাদের মনকে নাড়া দেয় নাতাদের জোটের একজন নেতা বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেনওই নেতা বলেছেন, কাদের যেন সাহায্য না পেলে আওয়ামী লীগ জীবনেও ক্ষমতায় আসতে পারত না

তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরের মতো বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সব সমস্যা মোকাবেলায় জনগণের সাথে থাকবেতিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের সমস্যা নিয়ে রাজপথে লড়াই করবজাতীয় সংসদেও লড়ববেকারত্বের অভিশাপসহ সব সমস্যা থেকে বিএনপি জনগণকে মুক্তি দিতে পারে

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, জনগণের সমস্যাগুলো সমাধান করুননির্বাচনের আগে প্রতিটি পরিবারে চাকরি, ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার ও পাঁচ টাকা কেজি কাঁচামরিচ দেয়ার যে ওয়াদা করেছিলেন তা পূরণ করুনআর যদি এসব ওয়াদা পূরণ করতে না পারেন তা হলে গদি ছেড়ে দিন; যাতে জনগণকে জোর করে আপনাদের ক্ষমতা থেকে তাড়াতে না হয়

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ই ভারত ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করেছিলফারাক্কার ফলে আমাদের দেশের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছেদেশের বিশাল এলাকা মরুকরণের দিকে যাচ্ছেএখন টিপাইমুখে আবার আরেকটি ফারাক্কা তৈরি করতে যাচ্ছে ভারতসরকারের উচিত ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির চেষ্টার বিরোধিতা করাএকই সাথে আমাদের তালপট্টি দ্বীপের ওপর ভারতের অন্যায় দাবির বিরোধিতা করে এর ওপর বাংলাদেশের দাবি জোরদার করা উচিত সরকারের

তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় এসে চারদিকে দলীয়করণ আর দখলদারিত্ব শুরু করেছেপাবলিক সার্ভিস কমিশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয় ক্যাডারদের বসানোর খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছেবিএনপি নেতাকর্মীদের বসতভিটা থেকে শুরু করে দোকানপাট, পুকুরের মাছ, জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও দখলবাজি চলছেনির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১০০ বিএনপি নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছেশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের হল দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সশস্ত্র লড়াই ছড়িয়ে পড়েছেমহাজোটেরই এক নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দিনবদল মানে টেন্ডারবাজি আর হল দখল নয়

তারা এ দেশে শক্তিশালী সেনাবাহিনী চায় নাআওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীর পরিবর্তে রক্ষিবাহিনী গড়ে তুলেছিলআজো সে ষড়যন্ত্র চলছেতিনি বলেন, পিলখানায় সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করা হলো অথচ প্রধানমন্ত্রী সকালেই বিষয়টি জানতে পেরেছিলেনপ্রধানমন্ত্রী গৃহযুদ্ধের কথা বলেন, কিন্তু কিসের গৃহযুদ্ধ? জনগণ সেনাবাহিনী ও বিডিআরর পক্ষে আছেতিনি যদি ওই সময় সেনা অভিযানের অনুমতি দিতেন তা হলে বিদ্রোহীরা অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতঅথচ তা না করে তিনি হত্যাকারীদের সাথে বসে আলোচনার নামে চা পান করেছেনএই প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশের জনগণ নিরাপদ নয়তিনি বলেন, প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করতেই পিলখানা ট্র্যাজেডির তদন্ত বিলম্বিত করা হচ্ছেআজ সীমান্ত ফাঁকা রয়েছেভারতীয় পণ্যে দেশ সয়লাবআওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল জরুরি সরকারের সময় আমাদের রেখে যাওয়া ১৮ থেকে ২২ টাকার চাল ৪০ টাকায়, ৪৫-৬০ টাকার ভোজ্যতেল ১২০ টাকায় এবং ৪৫ টাকার ডাল ১২০ টাকায় জনগণকে খাইয়েছেআজো এসবের দাম সেভাবে কমাতে পারেনি

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার কোনো সমাধান না করতে পেরে তারা আমাদের চারদলীয় জোট সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছেঅথচ চারদলীয় সরকার জাতীয় গ্রিডে ১২০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নতুন সংযোজন করেছিলআমরা সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করে গিয়েছিলামতিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চারদলীয় সরকার নাকি বিদ্যুৎ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে অথচ ওই সময় বিদ্যুৎ খাতের মোট বাজেটই ছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকাএর মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকা সংশ্লিষ্টদের বেতনবাকি টাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন, উন্নয়ন ও সঞ্চালনে ব্যয় হয়েছেতিনি এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীকে তার দাবির পক্ষে প্রমাণ দেখানোর চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সত্য ও তথ্যভিত্তিক কথা বলা উচিতহজ করে এসে মানুষ সত্যবাদী হন অথচ তিনি হজ সেরে এসে অসত্য কথা বলছেনএরকম প্রধানমন্ত্রীকে কিভাবে দেশের মানুষ বিশ্বাস করবেতিনি বলেন, মিথ্যা কখনো প্রতিষ্ঠিত হয় না, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্খাপন করা হচ্ছে­ আসলে এ কথা সত্য নয়পিডিবি এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ১/১১-এর পর থেকে জেল-জুলুমসহ নানাবিধ ভয়ভীতি ও লোভ-লালসা দেখিয়ে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছেকিন্তু বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শের দল, জনগণের দল; এ কারণে তারা বিএনপি ভাঙতে পারেনিতিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল জরুরি সরকার আমাকে দেশ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল; আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আমাকে বাড়ি ছাড়া করতে, রাজনীতি ছাড়া করতে

খালেদা জিয়া বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে চারদলীয় সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনসহ শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণ ও উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলতার সরকার ২০০৬ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করেছিলএ ছাড়া শ্রমিক ও উৎপাদনের স্বার্থে শ্রমিক-মালিক-সরকার­ ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্খা চারদলীয় সরকারই চালু করেছিল

শ্রমিক দল সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্খিত ছিলেন- খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড: খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাদেক হোসেন খোকা, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহেমদ, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, হাবিব উন নবী সোহেল, মজিবর রহমান সারোয়ার, শ্রমিক নেতা আবুল কাশেম চৌধুরী, উইং কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান প্রমুখ

শ্রমিক সমাবেশ উপলক্ষে নেয়া প্রস্তুতির প্রমাণ পাওয়া গেছে গতকালের সমাবেশেবেলা ৩টা বাজার সাথে সাথে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় পল্টন ময়দানব্যানারে-প্লাকার্ডে আর þöাগানে বর্ণিল আর মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা সমাবেশস্খলঢাকাসহ আশপাশের পাঁচটি জেলার লক্ষাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেনএ সময় অনেকের হাতে পানি-বিদ্যুৎ না থাকার প্রতিবাদস্বরূপ খালি কলসি, মোমবাতি, ম্যাচ দেখা গেছেআর নেতাদের বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল জনদুর্ভোগের নানা প্রসঙ্গ

No comments:

Post a Comment